ট্রাম্পের উত্থানে উদ্বিগ্ন ইউরোপ

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেকারণে ইউরোপের রাজনীতিতে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন তিনি। তবে কিছু মার্কিন মিত্র ট্রাম্পের আমেরিকান বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে মোড় নেওয়ার বিষয়ে চিন্তিত। আর ট্রাম্প এই নীতিতে ঝুঁকেছেন কারণ অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলির বিবেচনায় ভোটারদের সমর্থন পাবেন তিনি।

এডিসন রিসার্চের একটি জরিপ অনুসারে, গত সোমবার আইওয়াতে এক ভোটভুটিতে ট্রাম্প প্রশ্নাতীত জয় পেয়েছেন। পররাষ্ট্র নীতি ইস্যুকে সামনে রেখে অঙ্গরাজ্যের ককাসে ১০ জনের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন তিনি।

ককাসে ১০ জনের মধ্যে ৪ জন অর্থনীতিকে প্রথম এবং তিনজন অভিবাসনকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।

গত দশকে রয়টার্স/ইপসোসের ভোটাভুটিতে দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও চিত্র একই। যেখানে আমেরিকানরা বিদেশিদের সঙ্গে জড়িত বিষয়াবলিকে দেশের প্রধান সমস্যা হিসাবে দেখেন। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৈদেশিক দ্বন্দ্ব নয় বরং অভিবাসনকেই সংকট মনে করেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে রয়টার্স/ইপসোস জরিপ বলছে, দেশব্যাপী নাগরিকদের মাত্র ৬ শতাংশ বলেছেন যুদ্ধ এবং বিদেশি সংঘাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা, যেখানে ১১ শতাংশ অভিবাসন এবং ১৯ শতাংশ অর্থনীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখেন। আর ১০ শতাংশ অপরাধকে উল্লেখ করেছে।

অভ্যন্তরীণ উদ্বেগগুলো দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিচ্ছিন্নতাবাদ বেড়েছে, বিশেষ করে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে। কারণ ট্রাম্প এবং অন্যান্য নেতারা ২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন নীতির সমালোচনা করেছেন। ওই সময় ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছিলেন, এই সহায়তা আমেরিকাকে বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারে।

ওয়াশিংটনে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকেরা সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বৈদেশিক পরিকল্পনাগুলো পুনর্বিবেচনা করতে তাগিদ দিচ্ছেন। তবে ট্রাম্পের সহযোগিরা বলেছেন, তিনি ইউরোপকে প্রতিরক্ষা সমর্থন কমিয়ে দেবেন, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও সঙ্কুচিত করবেন এবং আবারও তার বৈদেশিক নীতির মূল হাতিয়ার হিসাবে শুল্ক প্রয়োগ করবেন।

কূটনীতিকেরা ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইউক্রেন, ইসরায়েল এবং তাইওয়ানের জন্য আরও বেশি তহবিলের অনুমোদন প্রস্তাবে কংগ্রেস রিপাবলিকানদের বিরোধিতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ তারা এখন আরও শক্তিশালী চীনের মুখোমুখি রয়েছেন।

রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস গত নভেম্বরে ফেডারেল সরকারের রাজস্ব খাত থেকে সমন্বয় করে ইসরায়েলকে সহায়তা দেওয়ার একটি বিল পাস করে। পরে ডেমোক্র্যাটিক সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেট সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে।

শিকাগো কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের জনমত বিশেষজ্ঞ ডিনা স্মেল্টজ বলেছেন, ট্রাম্প আমাদের বিভিন্ন জোট এবং বর্হিবিশ্বে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন, যেগুলোকে মোটামুটিভাবে গ্রহণ করা হয়েছিল।

সেপ্টেম্বরে শিকাগো কাউন্সিলের একটি জরিপে পাওয়া গেছে, ৫৩ শতাংশ রিপাবলিকান ভেবেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বৈশ্বিক বিষয়াবলির বাইরে থাকা উচিত’। ১৯৭৪ সালের পর প্রথমবার কোনো দল এই ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অবস্থানকে সমর্থন করল।

এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে, ইউরোপীয় কর্মকর্তারা চান না যে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরুক। ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্ড এই সপ্তাহে বলেন যে, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ইউরোপের জন্য হুমকি হবে। তার প্রথম মেয়াদে যেসব নীতি দেখা গেছে, তা অব্যাহত থাকলে আটলান্টিকের দুই পাড়ের মধ্যেকার সম্পর্ক হয়ত আর কখনো একইরকম হবে না। ইউরোপের জন্য সবথেকে বড় সমস্যা হল যে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা শেষ করতে তাদের আরও অনেক বছর, এমনকি কয়েক দশকও লাগতে পারে।


সূত্র- সিএনএন,  রয়টার্স


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //